এত নিষেধাজ্ঞাতেও মদ ছাড়েননি খালেদা, এবারের পরিস্থিতি শোচনীয়

0
662
খালেদা

১৯৯১-এর নির্বাচনের সময়কার কথা অনেকেরই মনে আছে। সেসময় নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির তৎকালীন অন্যতম প্রতিপক্ষ জামায়াতের ইসলাম তাদের প্রধানতম মুখপাত্র দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রতিবেদন ছাপে প্রথম পাতায় টপ লিডে। সেই কাভারস্টোরির সাথে খালেদা জিয়ার একটি ছবি যায়; মদের গ্লাস নিয়ে বিদেশিদের সাথে একটি পার্টির ছবি। শিরোনাম ছিল এমন- মদের গ্লাস হাতে খালেদা জিয়া, দেশবাসী বিচার করুন।

আরও পড়ুন : থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে খালেদার বাড়িতে মদ সাপ্লাই দিতে এসে গ্রেফতার

সেসময় দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না, তাই পত্রিকাগুলো এককভাবে শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম হিসেবে কাজ করত। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পত্র-পত্রিকাকে সমঝে চলতেন। কারণ কোনো বেফাঁস মন্তব্য বা তথ্য পত্রিকায় ছাপা হলে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ত। এই যুগে মানুষ পত্রিকার হেডিং পড়ে, সংবাদ পুরোটা পড়ে না। সেসময় দেশের সাধারন মানুষ, অর্ধশিক্ষিত জনগোষ্ঠীও পত্রিকার খবর নিয়ে সচেতন ছিলেন। আড্ডায়, চায়ের দোকানে, হাট-বাজারে রাজনীতি নিয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা অনেক শাণিত ছিল।

আরও পড়ুন : খালেদার সেই ৬২ হাজার ডলারের মেকআপ সামগ্রী এবং চাকরিচ্যুত এক সেনা কর্মকর্তার কথা

kz3ইনকিলাব পত্রিকায় খালেদা জিয়ার সেই ছবি তাই দেশজুড়ে আলোড়ন তুললেও জনতা খালেদা জিয়াকে নির্বাচিত করেছিল সেবার। তৎকালীন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সেজন্য সৌন্দর্যকে প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন বিভিন্ন সময়। একজন নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, সাজ-পোশাকে সিনেমার নায়িকার মত দেখতে, পর্যাপ্ত বিনোদনবঞ্চিত জনতার কাছে ভিন্ন আবেদন ছিল খালেদার। তাই মদের গ্লাস হাতে ছবি দেখেও ধর্মপ্রাণ বাঙালি তার সৌন্দর্যে মজেছিল।

আরও পড়ুন : যে গোপন কারণে থমকে গেছে খালেদা-ফালুর রোমান্টিক সিনেমার কাজ!

মদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তুপে মাথা তুলে দাঁড় করার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার পাকিস্তান আমলে স্থাপিত বার, ক্যাবারে, ক্যাসিনো, জুয়ার আসর, মদের দোকান- সব কিছুর ওপর কঠোর হন। ৭৫-এর পর ক্ষমতয় আসা জিয়া ও এরশাদ সেই বাঁধ ভেঙে দেন। ফলে মদের বন্যায় রাজনীতি ভেসে যায়। জিয়া নিজে মদ্যপ ছিলেন। যেদিন তিনি মারা যান, সেই রাতেও বেহেড মাতাল ছিলেন তিনি, তার ঘনিষ্ঠ সহচরদের সেই রাতের ঘটনার সাক্ষ্যতে উঠে আসে এসব তথ্য। খালেদা জিয়ারও মদ্যপানের অভ্যাস অনেক পুরনো।

আরও পড়ুন : ভাঙা স্যুটকেস-ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে শত কোটি টাকার মালিক জিয়া পরিবার

৯১-তে ক্ষমতায় বসার পর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের সীমা বাড়তে থাকে খালেদা জিয়ার। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মদ্যপানের অভ্যাস। ১ টাকার বিনিময়ে দখল করা মঈনুল রোডের সেই বাসভবন থেকে উৎখাত হওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা খালেদা জিয়ার বাসায় বিপুল পরিমাণ মদের বোতলের সন্ধান পান। এমন অনেক দুর্লভ সংগ্রহ ছিল যেখানে, যার একেকটি বোতলের মূল্য তৎকালীন বাংলাদেশি টাকায় ৬০ লক্ষ টাকারও বেশি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন দেশের নিলাম থেকে সংগ্রহ করা হতো এসব দামী মদ।

মদ জব্দmod-jobd

খালেদা জিয়ার মদ্যপানের অভ্যাস এমন পর্যায়ে যায় যে, তার মধ্যে ক্রমে স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের নিউরণে সমস্যা, স্মৃতিভ্রম, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, স্মৃতিবিলোপ, হেল্যুসিনেশনের লক্ষণ দেখা যেতে থাকে। এসবই ওয়ান-ইলেভেনের অনেক আগের কথা। এসব কারণে প্রায়শ দেখা যেত বিভিন্ন বক্তৃতায় ভুলভাল, অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান, দেখে দেখেও বক্তৃতা পড়তে ভুল করা, কূটনৈতিক বৈঠকে প্রায়ই এজেন্ডা ভুলে যাওয়া, ভারত সফরে গিয়ে তিস্তা প্রসঙ্গ ভুলে যাওয়া, বদমেজাজি আচরণ, গালাগালের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকট হতে থাকে ক্রমশ।

আরও পড়ুন : সাবেক দুই মন্ত্রীর শোকে অধিক মদ্যপানে অসুস্থ খালেদা(ছবিসহ)

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে বহুবার সাবধান করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গোঁয়ারের মত আচরণ দেখে চিকিৎসকরা চাপ দিতে সাহস করতেন না। খালেদার অনুসারীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে প্রায়শ বিদেশ থেকে দুর্লভ ও দামি দামি মদ এনে উপহার দিতেন। এই রীতি বন্ধ করতে পারেননি তার ভাই-বোনরা, অনেক চেষ্টা করেও। আর এভাবে স্বল্পবুদ্ধির এই রাজনৈতিক নেত্রীর জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। লিভারের জটিলতা বাড়তে থাকে। সেই সাথে যুক্ত হয় আরো নানান উপসর্গ। ওয়ান-ইলেভেনে জেলে থাকা অবস্থায় সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাকে প্রতিদিন পেঁপে পাঠাতেন পরিবারের সদস্যরা। পেঁপে ছাড়া তার টয়লেট যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যায় বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন : অধিক মদ্যপানে পাকস্থলি ক্যানসারে আক্রান্ত খালেদা, আতংকে বিএনপি!

দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক দফা বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন খালেদা জিয়া। সেসময় রাজনীতির স্বার্থেই গণমাধ্যমকে অনেক তথ্য গোপন করেছেন খালেদা জিয়ার পরিবার। এমনকি সর্বেশষ লন্ডন সফরে চিকিৎসা এবং আইএসআই’র সাথে বৈঠক- দুটোই চালিয়েছেন একইসাথে।

আরও পড়ুন : ২০১৭’র জুলাইতে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য ছিল আইএসআই’র সাথে গোপন বৈঠক

২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে কয়েক দফা গুরুতর অসুস্থ হন। দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতাল বিএসএমএমইউ-তে চিকিৎসা নেওয়ার পর আবার এভারকেয়ারের মত বিলাসবহুল হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন যেন, কেস হিস্ট্রি গোপন রাখা যায়। সেবার তিন দফায় খালেদা জিয়া হাসপাতালে ছিলেন। এই তিন দফায় তার চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। মাঝে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে পুনরায় মদ্যপান করে আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সবশেষে ৮১ দিন টানা চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন : Excessive alcohol consumption – A major cause of liver cirrhosis

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক সেসময় বলেছিলেন, শেষবার সবচেয়ে বেশি সময় ম্যাডাম চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়ে অনেক ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে ছিলেন তিনি। সার্জিক্যাল আইসিইউ ও সিসিইউতে ছিলেন। দেশে না থাকায় কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম আমেরিকা থেকে অর্ডার করে আনা হয়েছিল। এছাড়া কিছু যন্ত্র অন্য হাসপাতাল থেকেও এভারকেয়ারে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসবের পুরোপুরি ব্যবহার করেছেন। এভারকেয়ার সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার জন্য সবসময় একটি কেবিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট-সিসিইউ প্রস্তুত রাখা আছে। যদি ফের কোনো খারাপ অবস্থা তৈরি হয়, তা হলে আবার তাকে হাসপাতালে নেওয়া হবে। যার বিলও পরিশোধ করছে পরিবার। গতরাতে অসুস্থ হওয়ার পর সেখানেই তাকে রাখা হয়েছে।

[এত নিষেধাজ্ঞাতেও মদ ছাড়েননি খালেদা, এবারের পরিস্থিতি শোচনীয়]

KhaledaZiaগতবার তবুও যমে-মানুষে টানাটানি করতে করতে শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকলেও সন্তান-পরিজনহীন অবস্থায় ফিরোজায় একাকীত্বের যন্ত্রণা ভুলতে একটু সুস্থ হয়ে পুনরায় মদ্যপান শুরু করেন খালেদা জিয়া। যার প্রেক্ষিতে আবারও বড়সড় ধাক্কা খেলেন তিনি। তবে এবারের অবস্থা অনেক ভয়াবহ। ৭২ ঘণ্টা সিসিইউতে অবজারভেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড, এমনটি জানা গিয়েছিল গতরাতে। আজ দুপুরে জরুরিভিত্তিতে তার এনজিওগ্রাম করা হয়। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের হার্টে বেশ কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ে। তার মধ্যে একটি ব্লক ৯৫ শতাংশ। সেটিতে রিং পরানো হয়েছে।

আরও পড়ুন : খালেদার মৃত্যুর অপেক্ষায় বিএনপি, নাশকতার পরিকল্পনায় সতর্ক সরকার

তারেক-খালেদাএদিকে তার পরিবারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। তবে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারের পরিবারের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানে এর আগেও উনার (খালেদা জিয়া) লিভারে সংক্রমণ হয়েছিল আপনারা জানেন। উনার মলদ্বার দিয়ে রক্ত যেত বলে ডা. জাফরুল্লাহ স্যারও গণমাধ্যমে বলেছেন। চিকিৎসা দিয়ে কোনোরকমে সেটি বন্ধ করায় উনার প্রাণ বেঁচেছিল সেবার। তবে উনি অনিয়ম করেন প্রচুর, ড্রিংকস করেন, ছেলের (তারেক রহমান) সাথে ঝগড়াঝাটি করে আবারও ড্রিংকস করতে বসেন অনেক রাতে। কেউ কিছু বললে শোনেন না।

আরও পড়ুন :

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here