তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে নিয়মিত অসাম্প্রদায়িকতার প্রেসক্রিপশন দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। অথচ তারাই কীভাবে আদিলুর রহমান খানের মতো একজন সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা ব্যক্তিকে তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী বলে দাবি করে? মানবাধিকারের মুখোশ পরা ‘অধিকার’ নামক একটি ‘মানবাধিকার ব্যবসা’র প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে সমর্থন দেয় ইউরোপ-আমেরিকা? কারণ, তারা হয়তো জানে না যে- ‘অধিকার’ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি বিএনপি-জামায়াত জোটের একটা বিশেষায়িত কৌশলি উইং হিসেবে কাজ করে। এই সংস্থার মূল কাজ হলো- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ইমেজ খারাপ করা, একইসঙ্গে দেশবিরোধী প্রচারণার মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ নিয়ে এসে নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিশ্চত করা।
এই সংস্থাটির মুখ্য ব্যক্তিটি হলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা আদিলুর রহমান। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামায়াতের একজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি তিনি। ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর দলীয় বিবেচনায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল আদিলুর রহমান খানকে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর মূলে কারা: দ্য ডিপলোম্যাটের বিশ্লেষণ

আনুগত্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে সন্তুষ্ট করে সরকারের সর্বোচ্চ আইনজীবী তথা অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার শর্টলিস্টেও উঠে এসেছিলেন ধুরন্ধর আদিলুর রহমান। কিন্তু ২০০৮ সালের অবাধ নির্বাচনে ওই সাম্প্রদায়িক জোট সরকারের চূড়ান্ত পতন এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
[বিএনপি নেতা আদিলুর কোন যুক্তিতে মানবাধিকার কর্মী ?]
তবে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ বিরোধী অপপ্রচারের লিপ্ত হন বিএনপি-জামায়াতের অন্যতম থিংক-ট্যাংক আদিলুর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের হয়ে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি ও তার সংস্থা ‘অধিকার’।
আরও পড়ুন : মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’র আড়ালে বিএনপি’র অর্থায়ন ও নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি
বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে, ২০১৩ সালের ৫ মে, হেফাজতের ইসলামের উগ্রবাদী নেতাকর্মীরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সারাদিন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বৃক্ষনিধন ও হামলা চালায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় অসাংবিধানিকভাবে সরকার দখলের সেই অপচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন : দেশকে অস্থিতিশীল করার ব্লু প্রিন্ট বিএনপি-জামায়াতের
সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায়, ক্ষুব্ধ চক্রান্তকারীরা নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এবার প্রকাশ্যে আসেন আদিলুর ও তার সংস্থা ‘অধিকার’। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় সহিংসতা ছড়ানো এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তথ্যসন্ত্রাস শুরু করে তারা। শত শত হেফাজত কর্মীকে হত্যা ও গুম করা হয়েছে বলে দেশের ভেতর গুজব ছড়াতে থাকে তারা। এমনকি বিভিন্ন ঘটনার পুরনো ছবি যুক্ত করে সেগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছিলেন, “জনমনে আতঙ্ক ছড়াতেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র এমন গুজব ছড়াচ্ছে। তবে এটি রাজনৈতিক ইস্যু। বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে এরকম বহু ঘটনার প্রমাণ পাওয়ায় এটিকে তাদের একটি কৌশলও বলা যেতে পারে।”
আরও পড়ুন : সামনে হেফাজত, পেছনে বিএনপি-জামায়াত, ডার্কওয়েবে আইএস
এসব ভুয়া তথ্য ও বানোয়াট প্রতিবেদনকে ব্যবহার করে সপ্তাহব্যাপী দেশের ভেতরে সাম্প্রদায়িক উস্কানি চালাতে থাকে বিএনপি-জামায়াত। ফলে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। অন্যদিকে, বেসরকারি সংস্থা ‘অধিকার’ এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ম্যানেজ করার জন্য বানোয়াট প্রতিবেদন তৈরি করে জোর লবিং চালাতে থাকে আদিলুর রহমান।
আরও পড়ুন : বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিনষ্টের নয়া মিশন বিএনপির!
[বিএনপি নেতা আদিলুর কোন যুক্তিতে মানবাধিকার কর্মী ?]
পরবর্তীতে গণমাধ্যমের সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়- আদিলুরের তালিকা অনুসারে যারা ‘মৃত’, তারা নিজ নিজ মাদ্রাসায় নিজ কাজে বহাল রয়েছেন। ফলে বিএনপি-জামায়াতের পেইড-এজেন্ট হিসেবে বেসরকারি সংস্থা ‘অধিকার’ এর কর্মকাণ্ড এবং আদিলুর গংদের তথ্যসন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র দেশবাসীর সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার হন আদিলুর। ‘অধিকার’-এর কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে আদিলুর রহমানের অনেক অপরাধের তথ্য-প্রমাণ হাতে পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২ মাস পর জামিনে মুক্তি পান আদিলুর। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তিনি মালয়েশিয়ায় যান, কিন্তু সন্দেহজনক কাজে জড়িত থাকার সন্দেহে সেখান থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে।
আরও পড়ুন : দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও থেমে নেই বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, গুজব ও অপপ্রচার
কিন্তু মালয়েশিয়ান পুলিশের হাতে আদিলুরের আটকের ঘটনাকে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বলে গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াত গং। এভাবেই আদিলুর যেমন বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে যাচ্ছে, তেমনি মানবাধিকার সংস্থার ছদ্মবেশে ‘অধিকার’-কে সামনে রেখে আদিলুরের ‘মানবাধিকার ব্যবসার’ জন্য নিয়মিত অর্থ জোগান ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত চক্র।
আরও পড়ুন :