মুখে মুখে প্রতিদিনই গলা ফাটিয়ে বাঘ-ভালুক শিকার করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় তিনি মাইকের সামনে ঝড় তোলেন। বর্তমানের বিএনপি রাজপথে হারিকেন মিছিলে ব্যস্ত, সেই সাথে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে ভাবছে। ঠিক এই সময় সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মির্জা ফখরুলের গোপন বৈঠকের খবর চাউর হয়েছে। এই বৈঠক নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে তোলপাড় চলছে।
বৈঠকের খবরটি কি শুধুমাত্র সন্দেহ নাকি এর সত্যতা আছে- এমন প্রশ্নে বিএনপির কয়েকজন নেতা উষ্মার সাথে জানান দেন, ফখরুল একটা বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান। দলের কর্মসূচি দিলেই তাকে আর পাওয়া যায় না, অসুস্থতার ভং ধরেন। আমাদের নেতা-কর্মীরা মামলায় হাজিরা দিতে দিতে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছে, অথচ ফখরুলের মামলাগুলো কোনো এক অদৃশ্য শক্তির বলে থেমে আছে। সরকারের সাথে তার নিশ্চয় কোনো দেন-দরবার আছে, সেজন্যই তার মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে না। ফখরুল বিএনপির ঘরের ইঁদুর, যে ঘরে বসেই ঘরের বেড়া কাটছে।
আরও পড়ুন : মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে লন্ডনে গোপনে চিঠি পাঠালো বিএনপির একাংশ
বিএনপির সেই নেতাদের দাবি, যখনই বিএনপি আন্দোলনের চেষ্টা করে, তখনই মির্জা ফখরুল সরকারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করেন এবং আমাদের আন্দোলনকে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত করেন।
যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির ফখরুলপন্থী একাধিক নেতা এ ধরনের বৈঠকের খবর অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, এই অপপ্রচার চালাচ্ছে সরকারদলীয় লোকজন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য। বিএনপির আন্দোলন দিকভ্রান্ত করতেই চক্রান্ত চালানো হচ্ছে। আসলে এ ধরনের কোনো বৈঠক করা হয়নি।
[সরকারের সাথে ফখরুলের গোপন আঁতাত সন্দেহে বিএনপিতে তোলপাড়!]
মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠরা এসব অস্বীকার করলেও বিএনপিতে ক্রমশ সন্দেহ ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে এটাই মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলের শেষ দায়িত্ব পালন, পরবর্তী কাউন্সিলে নতুন কাউকে দায়িত্বভার তুলে দিতে হবে। কিন্তু পদ ছাড়তে রাজি নন ফখরুল। তাই গদি টিকিয়ে রাখতে নানা ফন্দি-ফিকির করছেন। সরকারের সাথে আঁতাত করে বেড়াচ্ছেন আগামী কাউন্সিল ব্যাহত করতে।
এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মির্জা ফখরুল সরকারের অন্তত তিনজন ব্যক্তির সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি, তারা সরকারের মন্ত্রী না হলেও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া মির্জা ফখরুল তাদের সাথে আগেও বৈঠক করেছিলেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : খালেদা-তারেক মাইনাস, নির্বাচনে অংশ নেবে ফখরুলের বিএনপি
তবে একটি সূত্রের দাবি, এটি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের বৈঠক। নির্বাচনের আগে ফখরুলের সাথে এ ধরনের একাধিক আলাপ-আলোচনা এবং বৈঠক হতে পারে। এসব বৈঠকের বিষয়ে খালেদা জিয়ার সায় আছে বলে দাবি সূত্রের। আর এমন দেন-দরবারের মধ্য দিয়েই হয়ত শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনের পথে আসতে পারে।
এদিকে এই গোপন বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপিরর একাংশের দাবি, মির্জা ফখরুলের পক্ষে দলের স্বার্থ জলাঞ্জলী বাদ দিয়ে নিজের স্বার্থে গোপন বৈঠক করা সম্ভব। কারণ, ফখরুল সরকারের এজেন্ট বলে আগে থেকেই অনেকের সন্দেহ।

বিএনপি’র একজন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও মির্জা ফখরুল সরকারের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে আসন ভাগাভাগির জন্য দেন-দরবারও করেছিলেন তিনি। এমনকি অনেকেই জানেন, তিনি (ফখরুল) সস্ত্রীক বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থও নিয়েছিলেন।
ওই নেতা আরও দাবি করেন, ওই সময় সরকারের সাথে দেন-দরবারের কারণেই মির্জা ফখরুল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্ররোচিত করেছিলেন। কোনোরকম দাবি-দাওয়া পুরণ ছাড়াই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায় বিএনপি।
আরও পড়ুন : ফখরুলের আদৌ করোনা হয়েছে নাকি নাটক, সন্দেহ বিএনপির
বিএনপির বড় একটি অংশ মনে করে, মির্জা ফখরুল উপরে বিএনপির রাজনীতি করলেও তিনি সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে গোপন মিশনে আছেন। সরকার যেভাবে চায় সেভাবে তিনি বিএনপিকে পরিচালিত করেন।
এদিকে জামায়াতের প্রতি নমনীয় মনোভাব পোষণকারী এবং মির্জা ফখরুলের অতি ঘনিষ্ঠ একজন জেলা নেতা এ ধরনের বৈঠকের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে ভিন্ন। আর ফখরুল যদি এমন বৈঠক করেনও, তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ তার কাছে কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি সেটিই করবেন, যা তারেক রহমান নির্দেশ দিবেন।
[ফখরুলের গোপন আঁতাত সন্দেহে বিএনপিতে তোলপাড়!]
ফখরুলপন্থীদের দাবি, সরকারদলীয় মিডিয়াগুলো বিএনপিকে বিভ্রান্ত করতে এবং চাপে ফেলতে এ ধরনের প্রচারণার কৌশল নিয়েছে। আসলে এমন কোনো গোপন বৈঠক হয়নি।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৭, ২৯ এবং ৩১শে জুন তারিখে কোন অজ্ঞাত স্থানে গিয়েছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপি সংশ্লিষ্ট কেউই দিতে পারেননি। কেউ কেউ ফখরুলের অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বিশ্রামে ছিলেন বলে দায়সারা জবাব দিয়েছেন।
আরও পড়ুন :