বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে দ্রুত। কভাবে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ২০২৩ সালের শেষ দিকে। কিন্তু এ নির্বাচনে অংশ না-নিতে টালবাহানা করছে প্রধান প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ভোট থেকে দূরে থাকতে তাদের ওজর-আপত্তির শেষ নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি নেতৃত্বের আস্থাহীনতা ও গণবিরোধী কর্মসূচির কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। যে কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করার অজুহাত খুঁজছে। এ ছাড়া নেতৃত্বসংকটও দলটির নির্বাচনে অনীহার বড় কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আস্থাহীনতায় বিএনপি নেতৃত্ব:
এতিমদের টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর দলে নিজের আস্থা ধরে রাখতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছেন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা ও শেখ হাসিনাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টার দায়ে তাকে সাজা দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন: এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ: জিয়া পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির একটি বড় উদাহরণ
লন্ডন থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা তার ওপর বিরক্ত, তারা তার ঔদ্ধত্য মেনে নিতে পারছেন না। অনেকে মনে করেন, মাঠের বাস্তবতার সঙ্গে তারেক রহমানের কোনো সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের পরিস্থিতির সঙ্গে তার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো খাপ খাচ্ছে না। বাস্তবতাহীন ও গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বে ভুগছে বিরোধী দলটি।
যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়েই তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে:
দেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে ব্যারাকে জন্ম নেয়া দল বিএনপি। সেই কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা দলটির এখনকার নেতাদের মধ্যেও আছে। যে কারণে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার পরিবর্তে বলপ্রয়োগই তাদের বেশি পছন্দ। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ১৯৭৫-এর পুনরাবৃত্তিরই চেষ্টা ছিল। তারা এক আঘাতেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছে। কাজেই বাবার পায়ের ছাপ ধরেই সামনে এগোতে চেষ্টা করছেন তারেক রহমান। ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জিয়াউর রহমানের।
আরও পড়ুন: জেএমবির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তারেক রহমান: উইকিলিকসের নথি ফাঁস
উইকিলিকসের ফাঁস করা কূটনৈতিক ক্যাবলে বাংলাদেশের লুটপাটের সরকার ও সহিংস রাজনীতির প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে তারেক রহমানকে। ফাঁস হওয়া ক্যাবল থেকে জানা গেছে, তারেক রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছিল ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজা হওয়ার পর দল ও দলের বাইরে তার অবস্থান নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বিএনপির ছায়ায় থেকে দেশজুড়ে গ্রামেগঞ্জে কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গেল বছর দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক সহিংসতার জন্য জামায়াতকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব সত্ত্বেও জামায়াত ছাড়ছে না বিএনপি; বরং যুদ্ধাপরাধীদের দলটিকে সঙ্গে নিয়েই তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বানচাল করতে জামায়াত একা যে সন্ত্রাস শুরু করেছিল দেশে, নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি আদায় করতে গিয়ে বিএনপি তাতেই যোগ দেয়।
তারা স্বতন্ত্র কোনো আন্দোলন গড়ে তোলেনি। তাদের আন্দোলনের নামে নাশকতা অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। তৈরি হয় নতুন নতুন রেকর্ড। অথচ এতে কোনো জনসম্পৃক্ততা ছিল না; দলের সাধারণ নেতাকর্মীও তাতে অংশ নেননি।এমনকি ২০১৭ সালে কানাডীয় এক আদালতের রায়ে সহিংস তৎপরতার দায়ে বিএনপির সঙ্গে সন্ত্রাসী তকমা জুড়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ভুলের চূড়ায় পৌঁছায় বিএনপি। তখন জালিয়াতির অভিযোগ তুলে শেষ মুহূর্তে এসে তারা নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে।
অযৌক্তিক ইভিএম বিরোধিতা
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের আভাস দিলে তার বিরোধিতা করে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন থেকেই নানা কলাকৌশল ও ফন্দিফিকির শুরু করেছে। এ সরকার পদত্যাগ না করলে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
আরও পড়ুন: জালিয়াতির সুযোগ নেই তাই ইভিএম নিয়ে বিএনপির অপপ্রচার
কিন্তু আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটদান ও নিজেদের মতামতের অন্যতম প্রতিফলন ইভিএম। ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় একাধারে যেমন সঠিকভাবে ভোট দেয়া যায়, তেমনি ভোট গোনাও যায় দ্রুত। ইভিএমে ভোটদানে কারচুপির সুযোগ থাকে না। আবার কেউ চাইলেই ভোট শুরুর আগে ভোট দিতে পারবে না। ব্যালট বাক্স নিয়ে দৌড়ে পালালেও কিছু হবে না। যে কারণে ইভিএমে ভোট দেয়া একেবারে নিরাপদ।
ইভিএমে ভোট দিতে গেলে প্রথমে স্মার্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ভোটার নম্বর ও আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হয়। তারপর ইলেকট্রনিক ব্যালটে ভোট দেয়ার সুযোগ পান ভোটার। কাজেই এতে জালিয়াতির সুযোগ ন্যূনতম নেই।
উন্নয়ন অস্বীকার:
রাজনৈতিক মাঠে সফল হতে না-পারলেও শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বীকৃতি দিতে নারাজ বিএনপি। পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা থেকে তা বাস্তবায়ন—পুরো সময়টিতেই এর বিরোধিতা করে গেছেন দলটির নেতারা। কখনো বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা, কখনো দুর্নীতির অভিযোগ, আবার কখনো সেতুটির পেছনে নিজেদের কৃতিত্বের দাবি তোলার চেষ্টা করেছেন তারা। আবার সেতুতে উঠতে নেতাকর্মীদের সমাবেশে বারণ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক সমাবেশে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল এমন: ‘পদ্মা সেতু কি হচ্ছে? হচ্ছে না। এ সরকার পদ্মা সেতুও করতে পারল না।’ এর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি আবারও একই ধরনের মন্তব্য তার। আবারও কটাক্ষ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে আর হবে না। আর যদি সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’
পিছিয়ে ছিলেন না দলের অন্য নেতারাও। সুর মেলাতে থাকেন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমর্থনে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘টিকবে না পদ্মা সেতু।’ ১১ জানুয়ারি তিনি বলেন, ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপর পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতু রং (ভুল) ডিজাইনের ওপর নির্মিত হচ্ছে।’ কিন্তু তাদের সব সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে পদ্মার বুকজুড়ে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ্য সেতুটি।
[আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করার অজুহাত খুঁজছে।এ ছাড়া নেতৃত্বসংকটও দলটির নির্বাচনে অনীহার বড় কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে—রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল]
এক দশক ধরে ভুলে ভুলে জনগণের ওপর থেকে প্রভাব খুইয়েছে বিএনপি। বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেয়ার মতো আত্মবিশ্বাসও তাদের নেই। আর দলটির পতন ত্বরান্বিত করেছে অন্তর্কোন্দল। গেল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় দুই বিএনপি নেতাকে বরখাস্ত করা হয়। দলীয় ভোট বিভক্ত হয়ে পড়ায় তারা নির্বাচনে হেরে যান।
সক্ষমতা দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ:
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নে গেল এক দশকে আওয়ামী লীগ যে সক্ষমতা দেখিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ চালকের আসনে।
আরও পড়ুন: