ইতিহাসে দেখা যায়, ছাত্র রাজনীতিতে প্রথম সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে ক্যাম্পাসে অস্ত্রধারী ছাত্রনেতাদের জন্ম দেওয়া হয়। জিয়া প্রথম কতিপয় ছাত্রনেতাদের নিয়ে নৌবিহার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে আরেক সামরিক শাসক এরশাদের আমলে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একপ্রকার ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’-এ পরিণত হয়। এ সময় এরশাদের তৈরি সংগঠন ছাত্র সমাজ ক্যাম্পাসে নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে।
৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে পরাজিত ছাত্রদলের কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। এ সময় ছাত্রদলের হামলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মী কফিল উদ্দিন কনক নামের এক ছাত্র নিহত হন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯০ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত নেতা নীরু-অভি গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ক্যাম্পাসের চা দোকানদার নিমাই বুলেটবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
[১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রদল-ছাত্র শিবির প্রথম হল দখল এবং হলে হলে নির্যাতনের ভীতিকর ‘সংস্কৃতি’র জন্ম দেয়]
এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হল দখলের রাজনীতি শুরু হয়। এসব হল দখলে মূলত নেতৃত্ব দেয় বিএনপির অঙ্গ ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তার সঙ্গে ক্যাম্পাস দখলের সহযোগী হয় বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতার প্রচ্ছন্ন অংশীদার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বাধীন জামায়াতের সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রশিবির। হল দখল, ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’র নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল শুরু হয়। সে সময় ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে। একাধিক খুনসহ ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হন অসংখ্য সাধারণ ও বিরোধী মতের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুনঃ ইলিয়াস আলী: যেভাবে ক্যাম্পাসের অস্ত্রবাজ ক্যাডার থেকে ফ্রন্টলাইনে
১৩ মার্চ, ১৯৯২ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে প্রচুর গোলাগুলির এক পর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মইন হোসেন রাজু টিএসসির সড়ক দ্বীপে গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর পর ময়না তদন্ত ছাড়াই রাজুর লাশ দাফন করা হয়।
৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২ সূর্যসেন হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন ছাত্র নিহত হয়।১ নভেম্বর, ১৯৯৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ভবনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নাট্য সম্পাদক জিন্নাহকে গুলিতে হত্যা করে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা।২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ ছাত্রদলের মধ্যে দুটি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দিবাগত রাতে ফজলুল হক হলে এক সাধারণ ছাত্র গুলিতে নিহত হন। তার নাম সারোয়ার হোসেন মিঠু।২ জুলাই ২০০০ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে (লাল্টু-পিন্টু) একজন বহিরাগত বোমায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
[১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রদল-ছাত্র শিবির প্রথম হল দখল এবং হলে হলে নির্যাতনের ভীতিকর ‘সংস্কৃতি’র জন্ম দেয়]
২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো।২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সনি।
একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন,বিএনপির শাসনামলে ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্ররা ঠিকমত থাকতে পারে নি।অস্ত্রের মহড়া দিত ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্যাম্পাসে অস্ত্রের রাজনীতি বন্ধ হয়েছে।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অপরাধী দের কখনও প্রশ্রয় দেন না।যার একটি উদাহরণ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হওয়া।
আরও পড়ুনঃ
- বিএনপি সাদা হাতিদের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে
- মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ২১শে আগস্টের হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা
- দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এবং কিছু পত্রিকা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে