মুচলেকার নামে খালেদাকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন ফখরুল

0
295
রাজনীতি

বিএনপির রাজনীতিতে এতদিন ধরে একটা কথা প্রচলিত ছিল, সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি খালেদা জিয়া কারাগারের পরিবর্তে নিজগৃহে অবস্থান করতে পারবেন রাজনীতি না করার শর্তে। খালেদা জিয়া নিজগৃহে ফেরার পর থেকে বিএনপি তাদের সকল আন্দোলন-কর্মসূচিতে বারবার এই শর্তের কথা তুলে ধরে সরকারের প্রতি বিষোদ্গার করেছে।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা টিভিতে, পত্রিকায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি না করার শর্ত মেনে নিয়ে মুচলেকা প্রদানের বিষয়টি নিয়মিত তুলে ধরেন।  অথচ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট বলেছেন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না- এমন মুচলেকার কথা নির্বাহী আদেশে মুক্তির আবেদনে ছিল না। তাহলে প্রশ্ন হলো, এতদিন ধরে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও সকল কর্মসূচির বাইরে রাখা অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় করে রাখার পেছনে দায়ী কে?

খালেদা জিয়ার মামলাগুলো যারা পরিচালনা করতেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, স্থায়ী কমিটির সদস্য (প্রয়াত) ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন, খালেদা জিয়ার উপদষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ। এমনকি কয়েকটি মামলার শুনানিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাভোকেট রুহুল কবির রিজভীও অংশ নিয়েছেন।

আটকাবস্থায় খালেদা জিয়ার সাথে আইনজীবীগণ ও পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে পারলেও সিনিয়র নেতাদের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে। খালেদা জিয়ার কারাবরণের পর দর্শণার্থীর সংখ্যাও কমে যায়। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার সাথে আইনজীবী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মাঝে একমাত্র সেতুবন্ধন হয়ে দাঁড়ান মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

আরও পড়ুনঃ মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে লন্ডনে গোপনে চিঠি পাঠালো বিএনপির একাংশ

খালেদা জিয়ার বাড়িতে অবস্থানের পর শুধুমাত্র ফখরুলেরই যাতায়াত ছিল ফিরোজায়। তিনি দেখা করে এসে যা বলতেন, সেটাই খালেদা জিয়ার আদেশ ভেবে নেতারা রাজনীতি করেছেন। এমনকি খালেদা জিয়া অন্তরীণ অবস্থায় কেন রাজনীতি করতে পারছেন না- সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মির্জা ফখরুল নিজে। তিনিই মিডিয়ার সামনে প্রথম দাবি করেছেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না সরকার। এমন শর্তারোপ করে নাকি সরকার তার ‘অধিকার হরন’ করছে বলে অদ্ভূত দাবি করেন। পৃথিবীর কোনো দেশে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর রাজনৈতিক অধিকার রয়েছে কি না- সে প্রশ্ন অবশ্যই আসবে। তবে খালেদার রাজনৈতিক অধিকার হরন করা হয়েছে- এমন দায় সরকারের ওপর চাপিয়েছেন ফখরুল নিজের স্বার্থেই। যদিও সরকার যে এমন কোনো শর্ত দেয়নি, সেটা ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিস্কার।

ফখরুলের স্বার্থ কী- এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। ফখরুল মেঠো বক্তৃতায় পারদর্শী হলেও তৃণমূল কর্মীদের কাছে সেভাবে জনপ্রিয় নন। বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথের নেতাদের মধ্যে আমান, আলাল, বুলু, আব্বাসরা যতটা জনপ্রিয়, ফখরুল ততটা নয়। পদাধিকার বলেই তিনি বিবৃতি-বক্তৃতা দেন। যদিও তাকে সরকারের এজেন্ট বলে মনে করেন বিএনপির প্রান্তিক পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। কারণ রাজপথে আন্দোলন জমাতে ব্যর্থতার পেছনে ফখরুলের অযোগ্যতাকে দায়ী করা হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তার মামলা স্থগিত, অনেক মামলায় বাড়িতে বসেই স্থায়ী জামিন পেয়ে যাচ্ছেন, সরকারের কাছ থেকে সপরিবারে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার খরচ মিলছে, এমন খবর জানা যায়। এসব কারণে তাকে বিশ্বাস করেন না দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

আরও পড়ুনঃ মির্জা ফখরুল ইসলাম ভণ্ড ও প্রতারক -আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

খালেদা জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি, তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী; এ দুজন বিএনপির রাজনীতিতে কোনো অর্থবহন করেন না। তাই বর্তমানে দলের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে ফখরুল গদিতে আসীন। বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় এবং ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পায়, অবধারিতভাবেই প্রধানমন্ত্রী হবেন মির্জা ফখরুল। এই স্বপ্ন তিনি দীর্ঘদিন ধরেই লালন করে আসছেন। সে কারণেই খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন তিনি। এমনকি খালেদা জিয়ার জন্য ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া পদক কিনে এনে, প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে, তারেক ও কোকোকে শিশু মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে সমগ্র জাতির সামনে হাসির পাত্র বানানোটা হচ্ছে ফখরুলের ষড়যন্ত্র- এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন দলের অনেক সিনিয়র নেতা।

[মুচলেকার নামে খালেদাকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন ফখরুল]

আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার রাজনীতি না করার মুচলেকা দেয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না। ফখরুল যা বলেছেন প্রকাশ্যে, তারাও সেটা মেনে নিয়েছেন। মূলত খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে দূরে থাকলে বিএনপির একক কর্তৃত্ব থাকবে ফখরুলের হাতে; তার নির্দেশেই চলবে দল। ১০ই ডিসেম্বর তিনি ক্যু ঘটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যদিও তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন ক্রমাগত। তারেক যেহেতু দেশে ফিরতে পারছেন না, তাই খালেদাকে দলে অকার্যকর করে রেখে বিএনপিকেই এককভাবে গ্রাস করেছেন মির্জা ফখরুল।

তবে এখন আরেকটি মত শোনা যাচ্ছে, কৌশল খাটিয়ে সরকারই হয়ত মির্জা ফখরুলকে ব্যবহার করে বিএনপিকে নিজেদের হাতের পুতুল বানিয়ে নাচাচ্ছে; ১০ই ডিসেম্বর ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন মির্জা ফখরুল এবং তার অনুসারীরা; এসব তত্ত্বকে নিছক গুজব বলেও উড়িয়ে দিতে নারাজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত দুজন নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানালেন, ফখরুল যে সরকারের বিশেষ আনুকূল্য পায়, এটা ফখরুলের সামনেই স্কাইপ বৈঠকে তারেক রহমান বলেছিলেন গত অক্টোবরে দলীয় বৈঠকে। তাই রাজাকারের সন্তান ফখরুলকে আমরা বিশ্বাস করি না। ভদ্র সাজলেও সে একটা দুইমুখা সাপ।

 

আরও পড়ুনঃ  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here