এক্সক্লুসিভ: রমজানে বাজার সিন্ডিকেটের হোতা আমীর খসরুর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ!

0
258
বাজার

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার টালমাটাল। যার কারণে তেলের ও ডলারের দামের উল্লম্ফনের কারণে আমদানিকৃত পণ্যের পাশাপাশি জ্বালানি ও পরিবহন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় দেশে উৎপাদিত অনেক পণ্যের দামও বেড়েছে। এটাই বাস্তবতা। তবে এই বাস্তব পরিস্থিতির মাঝেও সুযোগ সন্ধানীরা সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে অযৌক্তিকভাবে ইচ্ছেমত পণ্যের দাম বাড়িয়ে। নির্দিষ্ট কিছু পণ্য, যা মানুষের নিত্যদিনের চাহিদার তালিকায় রয়েছে, এমন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে কারসাজির মাধ্যমে। বিশেষ করে রমজান মাসে যখন বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, সেসব পণ্য দেড় থেকে দুমাস আগেই আমদানিকারা মজুদ করা শুরু করেন। এরপর বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অধিক মূল্যে সেসব পণ্য ধীরে ধীরে খুচরা বাজারে ছাড়েন। কারসাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা তুলে নেন সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে।

আরও পড়ুনঃ অভিভাবকহীন নেতৃত্ব, দিকশূন্য বিএনপি

যে বিশেষ সিন্ডিকেট এই কারসাজিতে লিপ্ত থাকে, তার মধ্যে অন্যতম বিএনপির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তার মালিকানাধীন অন্তত ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মাধ্যমে খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেলসহ বিবিধ ধরণের পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিএনপি আমলে বাণিজ্য মন্ত্রী থাকাকালে আমীর খসরু দেশের মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছেন তার ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে তিনি সাধারণ রাজনীতিবিদ থেকে হয়ে গেছেন বেশ কয়েকটি পাঁচ তারকা হোটেল মালিক।

আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বিদেশে অর্থপাচার, হুন্ডি ব্যবসাসহ হেন কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি নেই, যা তিনি করেননি। যার ফলে তার ও তার স্ত্রীর নামে কয়েকটি দুর্নীতির মামলা চলমান আছে। অবৈধ লেনদেন, মুদ্রা পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমীর খসরুকে স্ত্রীসহ দুদকে তলব করা হয়েছিল। দুদকের চিঠিতে বলা হয়, খসরু বেনামে পাঁচতারকা হোটেল ব্যবসা, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার এবং নিজ, স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে শেয়ার ক্রয়সহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

জানা যায়, চীন অধ্যুষিত তাইওয়ানের একটি বিশেষ চ্যানেল ব্যবহার করে তিনি মানি লন্ডারিং করতেন। যা বৈধ করতেন সেখানকার দুটো ক্যাসিনোর মাধ্যমে। বিএনপির অনেক নেতাই তার এই র‌্যুটটি ব্যবহার করতেন। ধান্দাবাজির সুবিধার্থে খসরু তাইওয়ান প্রসঙ্গে চীন সরকারের নীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকায় তাইওয়ানিজ দূতাবাস খুলেছিলেন একক কর্তৃত্বে এবং খালেদা জিয়ার সম্মতিতে। এ বিষয়টি চীন ভালোভাবে নেয়নি, তারা তৎকালীন বিএনপি সরকারের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। ফলশ্রুতিতে খালেদা জিয়া সরকার ২০০৪ সালে তড়িঘড়ি খসরুকে বাণিজ্য মন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন এবং তার স্থলে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে পদায়ন করে।

তবে ততদিনে আমীর খসরু বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। দেশের বাইরে অর্থ পাচারের যে র‌্যুট তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, বিএনপি আমলে সেই পথে পাচার হয়ে গিয়েছিল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। অর্থ ও ক্ষমতাবলে আজ খসরু বিএনপির নীতি নির্ধারকদের একজনে পরিণত হয়েছেন। পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দ্রব্যমূল্যের কারসাজির যে সিন্ডিকেট তিনি গড়ে তুলেছিলেন, তা টিকে আছে আজও। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতি, চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনে খসরু অত্যন্ত প্রভাবশালী বলয় তৈরি করেছেন। তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাজ করলে ব্যবসায়ী হিসেবে বাজারে টিকে থাকতে পারেন না কেউই।

প্রায়শ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়, খাতুনগঞ্জের কোনো নামী ব্যবসায়ী নিখোঁজ, কেউ সর্বস্বান্ত হয়েছেন, কেউ পুঁজি খুইয়েছেন আমদানিকৃত পণ্য বাজারে ছাড়তে বাধা পেয়ে ইত্যাদি। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন খসরুর সিন্ডিকেট। ইতিপূর্বে সয়াবিন তেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল যখন, তখন টাস্কফোর্সের তৎপরতায় খসরু সিন্ডিকেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুদকৃত বিপুল সয়াবিন তেল উদ্ধার হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নভেম্বরে খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের সাথে আমীর খসরুর গোপন বৈঠকের একটি খবর ফাঁস করে দেন এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, বৈঠকে আমীর খসরু পেঁয়াজ, আলু, আদা ও রসুন মজুদ করে মূল্য বাড়ানোর কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সিন্ডিকেট পেঁয়াজ ও আলুর বাজারে অস্থিরতা তৈরী হয়। খসরু চট্টগ্রামে ও বিএনপির অপর দুই নেতা- মির্জা আব্বাস ও আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকার পাইকারি বাজার- শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাড়ায়। একপর্যায়ে টাস্কফোর্সের অভিযান শুরু হয়। দুদিনের মধ্যে দেখা যায় খাতুনগঞ্জের নিকটবর্তী চাক্তাই খালে রাতের আঁধারে মজুদকৃত পেঁয়াজ ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেছে সিন্ডিকেটের লোকজন।

এবারও রমজানের কয়েক মাস আগে কয়েকটি দেশ থেকে ছোলা, খেজুর, গরম মশলা, ডাল, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য আগাম আমদানির বন্দোবস্ত করে রেখেছিল খসরু সিন্ডিকেটের সদস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সতর্ক ছিল সরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার খবর গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিশেষ পর্যায়ে চলে গেলে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয় সরকার।

আরও পড়ুনঃ ঘরে বসে আন্দোলনের নামে ‘বাঘের হুংকার’ দিলেও রাজপথে বিড়ালের ভূমিকায় বিএনপি

যার ফলশ্রুতিতে ছোলা, তেল, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য এমন কয়েকটি উৎস বেছে নেয়, যেখান থেকে আগে এসব পণ্য আমদানি করা হয়নি, সেই সাথে পরিবহন খরচও কম হয়। তেমন বিকল্প কয়েকটি উৎস থেকে টিসিবিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করা হয়। যার ফলে বাজারে ছোলা, খেজুর, গরম মশলা, ডাল, তেল, চিনিসহ রমজানে জরুরি নির্দিষ্ট পণ্যগুলো পর্যাপ্ত চলে আসে।

[এক্সক্লুসিভ: রমজানে বাজার সিন্ডিকেটের হোতা আমীর খসরুর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ!]

এতে খসরু সিন্ডিকেট যে পণ্যগুলো আগাম মজুদ করে রেখেছিল চড়া দামে বিক্রি করার লক্ষ্য নিয়ে, সেই ষড়যন্ত্র মাঠে মারা যায়। বাজারে পণ্য এতটাই সহজলভ্য হয়ে যায় যে, গুদামে বেশিদিন মাল ধরে রাখলে রমজানের পর এসব পণ্য পোকায় কাটবে বা নষ্ট হবে এবং বিক্রিরও সুযোগ কমে যাবে। যার ফলে বাধ্য হয়ে সেই অসাধু ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত মূল্যের চেয়েও কম মূলে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন এখন।

সরকারের এই পরিকল্পনায় আমীল খসরুর এই অসাধু সিন্ডিকেটটি বড়সড় ধরা খেয়ে এখন দিশেহারা। বাজার অস্থিতিশীল করে সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে মাঠে নামানোর যে পরিকল্পনা ছিল, তা মাঠে মারা গেল। অপতৎপরতা চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে দুর্নীতির দায়ে মামলা চলমান থাকা বিএনপি নেতা খসরু গং এখন দুর্নীতি বিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে। অথচ দুর্নীতি তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আর মগজে।

আরও পড়ুনঃ  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here