তারেক রহমানের লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হোয়াইট এন্ড ব্লু কনসালটেন্ট কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ব্রিটিশ সরকার। সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে তাকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই অ্যাকাউন্টের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০১৫ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানীর পরিচালক ২ জন। একজন তারেক রহমান, অন্যজন জোবাইদা রহমান।
এই কোম্পানির রেজিষ্ট্রেশনে যে ঠিকানা ব্যবহারা করা হয়েছে তা হলো- ৩, কস্টউড ক্লোজ কিংস্টান থ্যাম্পস ইংল্যান্ড। এ ঠিকানা ব্যবহার করে এ কোম্পানি নিবন্ধন করা হযেছে। যেখানে তারেক রহমানকে একজন ব্রিটিশ নাগরিক দেখানো হয়েছে।
রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তারেক রহমান কীভাবে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করেন, তারেক রহমান হয়ত সেখানে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। যদিও তারেক রহমান এ ধরনের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
এখন এই কোম্পানিকে সন্দেহজনক কোম্পানি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী যদি অস্বাভাবিক লেনদেন হয়। এই কোম্পানি জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদে অর্থ যোগান করতে পারে এমন প্রাথমিক সন্দেহে যুক্তিসংঙ্গত কারণ সৃষ্টি হয়, তাহলে ব্রিটিশ সরকার ঐ ধরনের কোম্পানিকে বন্ধ করে দিতে পারে।
সংশ্লিষ্ট্য সূত্রগুলো বলছে, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, যা আয় বর্হিভূত। তারা কোন ধরনের ব্যবসা করে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
[অস্বাভাবিক লেনদেনে ব্ল্যাকলিস্টেড তারেকের কোম্পানি, নথি প্রকাশ]
২০১৮ সালে প্রথম কোম্পানিটির কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিলো ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু তার জবাবে তারেক রহমান সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। কোম্পানির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়, সে ব্যাপারে একটি ফরম পূরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই তা জমা দিতে কোম্পানিটি ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হোয়াইট এন্ড ব্লু লিমিটেডের নামে অর্থ আসছে। যা যুক্তরাজ্যে শেয়ার মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের কারণ দর্শনো নোটিশের জবাবে বলা হচ্ছে, এটি আ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। বিভিন্ন মানুষের টাকা বিনিয়োগ করে তাদেরকে লভ্যাংশ দেয়া হয়। আ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী হলে যে ধরণের অনুমোদন নিতে হয়, তা ঐ প্রতিষ্ঠানটি গ্রহণ করেনি। মূলত এটি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।
তবে প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেলেও তারেক রহমানের কোম্পানি কী ধরণের পরামর্শ দেয়, কাকে পরামর্শ দেয় সে ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে যে অবৈধ অর্থ আসে, তা বৈধতা দেবার জন্যই এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। ব্রিটিশ সরকার মনে করছে, এই অবৈধ অর্থ যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ অর্থ জঙ্গিবাদ বা অপতৎপরতায় ব্যবহৃত হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ কোম্পানি নিয়ে আরও তদন্ত হবে এবং পরবর্তীতে এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুনঃ
- যুক্তরাজ্যে তারেক ও জোবাইদার ৩ ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ – (যুগান্তর পত্রিকা ১৯ এপ্রিল ২০১৯)
- লন্ডনে তারেক-জোবাইদার ব্যাংক হিসাব জব্দে ব্যবস্থা নিতে ঢাকার আদালতের আদেশ -(প্রথম আলো ২৭ এপ্রিল ২০২২)
[অস্বাভাবিক লেনদেনে ব্ল্যাকলিস্টেড তারেকের কোম্পানি, নথি প্রকাশ]

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের যুক্তরাজ্যের একটি ব্যাংকে থাকা তিনটি হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ ব্যাংক হিসাব জব্দের এ আদেশ দেন। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের ওই হিসাবগুলো জব্দ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে একটি পারমিশন মামলা করা হয়।
ওই মামলার শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই দম্পতির জব্দ হওয়া ৩টি ব্যাংক হিসাবই যুক্তরাজ্যের Suntander Bank Uk-এর।
আরও পড়ুনঃ আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়ে হাসির পাত্র হলেন মির্জা আব্বাস
দুদকের করা পারমিশন মামলার আবেদনে বলা হয়- তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং অর্থ পাচারপূর্বক বিদেশে বিনিয়োগসংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানকালে দুদক একটি তদন্ত টিম গঠন করে। দুদকের অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের Suntander Bank UK এ পরিচালিত White and Blue Consultant Ltd. যার পরিচালক তারেক রহমান ও তারেক রহমানের নিজ নামীয় ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের নামীয় ৩টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৫৯ হাজার ৩৪১ দশমিক ৯৩ ব্রিটিশ পাউন্ড যুক্তরাষ্ট্রের ফিন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগেশন ইউনিটের (এফআইইউ, ইউকে) নির্দেশে আটক আছে।
বর্তমানে ওই অর্থ অন্যত্র হস্তান্তর বা রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন তারা। তাই ওই অর্থের বিষয়ে এখনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারা মতে জব্দ করা একান্ত প্রয়োজন।
দুদকের প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, আদালতের দেয়া জব্দের এ আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরে পাঠানো হবে। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এটি পাঠিয়ে আদেশ কার্যকর করবেন।
আরও পড়ুনঃ