বিএনপিকে নির্বাচনে নামাতে কূটনৈতিক চাপ, বিএনপি কি পারবে এই গ্যাঁড়াকল থেকে বেরোতে?

0
429
নির্বাচন

আগামী ১১ই জুলাই বাংলাদেশে ৩ দিনের সফর শুরু করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া, সঙ্গে থাকবেন আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। ৪ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে আরও থাকছেন একান্ত বিশেষ সহকারী ও স্টাফ সহকারী। সফরে তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা রেখেছেন। এই সফরে মার্কিন প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সহিংসতা ও অগণতান্ত্রিক পন্থা পরিহার করে সংবিধান মোতাবেক গণতন্ত্রকে সমুন্নত রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপিসহ অপর বিরোধীদলগুলোকে আহ্বান জানাবেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

শুধু মার্কিনিরাই নয়, শনিবার ৮ই জুলাই ঢাকায় এসেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) একটি বড়সড় প্রাক নির্বাচনী পর্যেবক্ষক দল। আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত যাচাই করবেন তারা। পাশাপাশি বিএনপিকে নির্বাচনে নামানোর জোর চেষ্টা চালাবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এজন্য ইইউর এই দলটি ৮ থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে। তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও মার্কিন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বিএনপি যেন নির্বাচনে নামে সেজন্য মার্কিনিদের সাথে তারাও কাজ করবেন বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

[বিএনপিকে নির্বাচনে নামাতে কূটনৈতিক চাপ, বিএনপি কি পারবে এই গ্যাঁড়াকল থেকে বেরোতে?]

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন ঘুচিয়ে সম্পর্ক সহজ করতে গত কয়েকমাস ধরে মার্কিন প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে উন্মুখ হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যা ঢাকা সফরে আসার আগে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি শুক্রবার ৭ই জুলাই ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে বৈঠককালে জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে টুইটার বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আমি আমাদের মধ্যকার শক্তিশালী অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।’ উজরা জেয়ার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মার্কিন প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। সেই সাথে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার স্বার্থে বিএনপিকে নির্বাচনে আনাটাও তাদের এজেন্ডার অংশ।

তবে প্রশ্ন হলো, বিএনপি এখন কী করবে? মার্কিন ভিসানীতি ঘোষিত হওয়ার পর থেকে বিএনপি বড্ড চাপে রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশে জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা চালাতে পারছে না। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া ও পলাতক তারেক রহমান- নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে দলের নেতারা নির্বাচনে না যেতে নানারকম ফন্দিফিকির করছেন, কখনো সংবিধান ডিঙানোর আব্দার করছেন। আবারও এক-এগারোর মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছেন, নইলে নির্বাচন করবেন না! প্রতিদিনই বিএনপি নেতাদের এসব আব্দার শুনছে জাতি। এমন উদ্ভট দাবি-দাওয়া যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করছে, বাংলাদেশের সাথে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবার মত শঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউররোপিয়ান ইউনিয়ন এবার আটঘাঁট বেঁধে নেমেছে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করতে।

[বিএনপিকে নির্বাচনে নামাতে কূটনৈতিক চাপ, বিএনপি কি পারবে এই গ্যাঁড়াকল থেকে বেরোতে?]

পশ্চিমা চাপ থেকে বাঁচতে উপায়ন্তর না দেখে বিএনপি তাই দ্বারস্থ হয়েছে চীন, রাশিয়া ও ইরানসহ বিভিন্ন পশ্চিমাবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর। ইতিমধ্যে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে উস্কানি দেয়ানোর চেষ্টা করেছে। রাশিয়া ও চীন যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের তৎপরতার বিরুদ্ধে, তার নেপথ্যে বিএনপির বিদেশ বিষয়ক কমিটির একটি প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় অবস্থিত দূতাবাসগুলোতে বিএনপির পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে স্ব স্ব দেশগুলো। এমনকি ইরানও বিবৃতি দিয়েছে, সরকারি টিভিতে এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। পশ্চিমারা যদি বিএনপিকে ধরে-বেঁধে নির্বাচনে নামিয়ে দেয়, তবে বিএনপি যে সেই বৈতরণী পাড়ি দিয়ে ডাঙায় উঠতে পারবে না, তাদের যে সেই শক্তি সামর্থ নেই, সেটা তাদের দলের নেতারা ভালো করেই জানে। নির্বাচনে গেলে বিএনপির অস্তিত্ব ধূলায় মিশে যাবে, তাদের দলের এখন এমনই করুণ অবস্থা।

তাই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি পারবে পশ্চিমাদের এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে?

আরও পড়ুনঃ

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here