আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে ফখরুল-তারেক দ্বন্দ্ব চরমে | তারেক চায় লাশ, ফখরুলের আপত্তি

0
456
ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে নিয়ে বিএনপিতে কানাঘুষা- তিনি সরকারের স্লিপার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। বিএনপির মাঠের আন্দোলনকে ভুলপথে নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনোবল নষ্ট করেন, কখনো দফা বা কর্মসূচি ঘোষণা করতে ভুলে যান, কখনো কর্মীদের রাজপথে নামিয়ে দিয়ে নিজে নিরাপদ দূরত্বে কিংবা অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুরনো মামলাগুলোর পেছনে হাজিরা দিতে তাদেরকে এখনো আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে হয়, কিন্তু মির্জা ফখরুলের মামলাগুলো কেন আশ্চর্যজনকভাবে থেমে আছে, কেউ তার উত্তর জানেন না। সরকারি খরচে সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল হাসপাতালে সস্ত্রীক চিকিৎসার কথাও শোনা যায় কান পাতলে। ফলে ফখরুল যে মূলত সরকারের গোপন এজেন্ট, এ নিয়ে বিএনপি কর্মীরা বলাবলি করেন।

এরইমধ্যে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমান ও ফখরুলের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারন করেছে। তারেকের চাওয়া আন্দোলন আরও বেগবান করা, কিন্তু ফখরুল বিদেশিদের ইশারার বাইরে কিছু করতে নারাজ। তারেক চান জ্বালাও-পোড়াও করে দেশকে অচল করে দিতে। দুজনের চাওয়া দুইরকম বলে বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছে না, জানালো দলীয় কার্যালয় সূত্র। গতরাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমান আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা নিয়ে নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেন। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারেক-ফখরুল দ্বন্দ্বে কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।

ফখরুল সাধারণত তারেক রহমানের একান্ত অনুগত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্দেশের বাইরে যান না ফখরুল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কূটনীতিকদের সাথে ঘন ঘন ওঠা-বসায় ফখরুল এখন তারেক রহমানের সাথে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত করছেন। যার প্রমাণ মিললো স্থায়ী কমিটির সভায়। আন্দোলনকে সারাদেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে দিতে অলআউট অ্যাকশনের (দেশব্যাপী তাণ্ডব) ওপর গুরুত্ব দেন তারেক। বলেন, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে যে সারাদেশ যেন অচল হয়ে যায়। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে আন্দোলন করতে হবে। কয়েকটা লাশ না পড়া পর্যন্ত সরকারের টনক নড়বে না। তারেকের নির্দেশনা ছিল এমনই। কিন্তু তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ফখরুল বললেন, কূটনীতিকরা কোনোভাবেই এই ধরনের আন্দোলনকে সমর্থন দিবে না। এসব কর্মসূচি ঘোষণা করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি।

[আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে ফখরুল-তারেক দ্বন্দ্ব চরমে | তারেক চায় লাশ, ফখরুলের আপত্তি]

এসময় ফখরুল আশুলিয়ায় বাসে আগুন দিতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরা খাওয়ার উদাহরণ দিয়ে তারেককে সহিংস আন্দোলন থেকে সরে আসতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তারেক এসময় উল্টো রেগে গিয়ে ফখরুলকে সরকারের দালাল বলে অভিহিত করেন। ফখরুল বোঝানোর চেষ্টা করেন, আগুন সন্ত্রাস করলে, লাশ ফেললে বিএনপির সঙ্গে কূটনীতিকদের সমস্ত সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।

এমনিতে কানাডায় বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কর্তৃক তারেক রহমানের ওপর এম্বার্গো আরোপসহ বিএনপির ভাবমূর্তি বিদেশিদের কাছে ভালো না। বিএনপি যদি সহিংসতার চেষ্টা করে তাহলে আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনের সুযোগ নেবে। এসময় ফখরুলের পক্ষে মত দেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন। কিন্তু তারেক সাফ জানিয়ে দিলেন, আন্দোলন জোরালো করতে না পারলে বিদেশিরাও দাম দিবে না। দেশ অচল করে দেয়ার মত কর্মসূচি নিতে না পারলে সরকারকে চাপে ফেলা যাবে না। প্রয়োজনে লাশ ফেলতে হবে, দলীয় কর্মীদেরর হলেও। এতে সরকার চাপে পড়বে। চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে আন্দোলনেও জয়ী হওয়া যাবে না।

তারেক রহমানের কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে ফখরুলও পাল্টা বললেন- আপনি লন্ডনে নিরাপদে আছেন, সব চাপ এবং ঠ্যালা সামলাতে হয় আমাদেরকে। লাশ ফেলার পর দৌড়ের ওপর থাকবে বিএনপির কর্মীরাই। যাদের নামে মামলা নাই, বা জামিনে রয়েছে, তাদের নামেও মামলা হয়ে যাবে যদি মিছিল-সমাবেশ বা পিকেটিংয়ে তাদের ছবি বা ভিডিও পাওয়া যায়। তারা জেলে গেলে কর্মসূচি আর এগোবে না। ফখরুলের এমন পাল্টা জবাব আশা করেননি তারেক।

[আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে ফখরুল-তারেক দ্বন্দ্ব চরমে | তারেক চায় লাশ, ফখরুলের আপত্তি]

এ রকম তর্ক-পাল্টা তর্কের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক। বৃহস্পতিবার রাতে আবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নেতারা অবশ্য বলছেন, তাদের আন্দোলনের কৌশল সবই চূড়ান্ত। আগামী শুক্রবার একটা বড়সড় কর্মসূচি ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। তবে দেখার বিষয় বিএনপি কি শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করবে, নাকি গ্রেনেড সন্ত্রাসী তারেক রহমানের নির্দেশমতো লাশ ফেলা কর্মসূচিতে নামবে।

আরও পড়ুনঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here