মনোনয়ন বাণিজ্যের ভরা মৌসুম, নির্বাচনে যাবো না বললেও ২৫০ আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত

0
271
নির্বাচনে

সারাক্ষণ একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে বিএনপি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নিলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। নির্বাচন হতে হবে তাদের সেই দাবি অনুসারেই,download (1) অন্য কোনোভাবে নয়। এমনকি সংবিধান বাতিল করার মত মামার বাড়ির আব্দারও তুলেছেন তারা। বিএনপির নেতারা মাইক হাতে পেলেই হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে হতে দেবে না বিএনপি। এই দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিফল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন বিরতি দিয়ে নতুন কর্মসূচি দেয়, কখনো গণমিছিল, কখনো পদযাত্রা, কখনো বা অনশন। তাদের এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাব সত্ত্বেও এবার মিলল চমকপ্রদ খবর। ভেতরে ভেতরে বিএনপি এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। লন্ডন থেকে গ্রিন সিগন্যাল আসার পরই গোপনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নড়েচড়ে বসেছেন নেতারা।

দলীয় কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতাতারেক জিয়া- Tarique Rahman তারেক রহমান গত কয়েকদিন ধরে স্কাইপে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এবং মনোনয়নের একটি প্রাথমিক তালিকাও করা হচ্ছে। অন্তত ২৫০টি আসনে বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত, তাদেরকে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তারা যেন নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি। নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির এই প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি আন্দোলন নিয়েও ব্যস্ত। তবে এরইমধ্যে জানা গেল আরেকটি খবর। অনেক এলাকায় একাধিক প্রার্থীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, ২০১৮ সালের মত। আবারও বড় অঙ্কের লেনদেনের খবর মিলছে। অর্থ সংকুলান করে লন্ডনে পাঠানোর তাগিদ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এবার তারেকের লক্ষ্য অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা। এদিকে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দ্বন্দ্বের জেরে ইতিমধ্যে সমর্থকদের মাঝে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বাগেরহাটে দুই প্রার্থীর সমর্থকের হামলা-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুজনের মাথা ফাটার খবর মিলেছে।

এদিকে বিএনপির নির্বাচনে যাবার খবরে কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত সরকারের চাপে নতি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে বাধ্য হচ্ছে- এমন কথাও উঠেছে। বিএনপির সামনে নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া পথ নেই, কূটনীতিকরা বিএনপিকে এমন টোটকা দিচ্ছে বলে- এ সংক্রান্ত যাবতীয় দায়ভার মির্জা ফখরুল, আমীর খসরু, শামা ওবায়েদসহ কূটনীতিক পাড়ায় ঘোরাফেরা করা বিএনপির নেতাদের ওপর চাপাচ্ছেন পোড় খাওয়া নেতারা। তাদের মতে, বিদেশিরা শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় আনতে বিএনপিকে বলির পাঁঠা বানিয়ে নির্বাচনে নামাচ্ছে। তবে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপির কয়েকজন প্রবীণ নেতা এভাবে হুটহাট প্রার্থী চূঢ়ান্ত করা দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

তাদের মতে, আবারও তারেক রহমানের মনোনয়ন বাণিজ্যের ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে টোপ দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা তুলে লন্ডনে পাঠানোর এমন হীন প্রক্রিয়াকে তারা সমর্থন করতে না পেরে প্রকাশ্যেই সমালোচনা করছেন। এভাবে রাজনীতি হয় না- এমন অভিমতও প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতা শ্রাবণকে পদচ্যুত করা হয়েছে। শ্রাবণ প্রায়শ তারেক রহমানের উদ্ভট সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নিজস্ব ফোরামে সমালোচনা করতেন বলে দাবি অনুসারীদের।

এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, সারাদেশে কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা ও চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে, তার বড় কারণ- নির্বাচনের সবুজ সংকেত। নির্বাচনি প্রস্তুতির কারণে কর্মীদের পেছনে টাকা খরচ করছেন নেতারা, তাদের উজ্জীবিত রাখছেন।

[মনোনয়ন বাণিজ্যের ভরা মৌসুম, নির্বাচনে যাবো না বললেও ২৫০ আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত]

সূত্র বলছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চাইছে জোটের শরিক ও সহযোগী দলগুলোর জন্য অন্তত ৫০টি আসন ছেড়ে দেবে। অর্থাৎ গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপিসহ বিভিন্ন দলের জন্য ৫০টি আসন ছেড়ে বাকিগুলোয় নিজস্ব প্রার্থী দেবে। তবে নির্বাচনে বিএনপি শেষপর্যন্ত জামায়াতের সাথে জোট করবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। জামায়াতের ব্যাপারে কূটনৈতিক মহলে আপত্তি থাকলেও তারেক চান জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করতে। তাই বিএনপি শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করবে নাকি ২০১৮ সালের নির্বাচনের মত ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিবে জামায়াতি প্রার্থীদের হাতে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

ঢাকা জেলা বিএনিপর এক নেতা বলেন, আমরা সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শেষ মুহূর্তে যদি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেই তাহলে আওয়ামী লীগই বিপদে পড়বে। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে এবং একতরফা নির্বাচন হবে।

কিন্তু সেটি দেয়া হবে না। আমরা আওয়ামী লীগকে বুঝিয়ে দিতে চাই, বিএনপি এখনো ফুরিয়ে যায়নি। যদি টাকার মানদণ্ডে চূড়ান্ত না করে যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা দেখে প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা হয়, তবে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তাছাড়া বিদেশি বন্ধুরা আমাদের আশ্বস্ত করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পেছনে তারা কাজ করছেন। যদি তা হয়, তবে বিএনপি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সেটি যে সরকারের অধীনেই হোক না কেন।

আরও পড়ুনঃ  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here