এয়ারবাস থেকে বিমান ক্রয় নিয়ে মির্জা ফখরুলের অ্যালার্জি এবং তার নিজের দুর্নীতির ইতিহাস

0
188
এয়ারবাস

এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ ক্রয়ে বাংলাদেশ-ফ্রান্সের চুক্তি নিয়ে বিএনপির অ্যালার্জি দেখা গেছে। বর্তমান সরকার বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করায় ঘুম হারাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের। তিনি এখন নানারকম দূরভিসন্ধি আবিষ্কার করছেন। অথচ বিএনপি-জামায়াত আমলে বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির, খালেদা জিয়ার ছোটভাই ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার শামীম এস্কান্দার, স্বল্পকালীন দায়িত্ব পাওয়া মির্জা ফখরুলসহ জিয়া পরিবারের সংশ্লিষ্টরা বিমানকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিলেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে পরিণত করেছিল দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। জোট সরকার এসময় নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় অদক্ষতা ও পরিচালনায় অক্ষমতার কারণে। পক্ষান্তরে এসব রুটের দখল চলে যায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর হাতে। ফলে চরম লোকসান ও ক্রমাগত অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বিমান।

আরও পড়ুন : এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ: জিয়া পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির একটি বড় উদাহরণ

MFKZকৃষি প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সার এবং কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে চরম অদক্ষতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দেন মির্জা ফখরুল। প্রতিবাদী কৃষকদের ওপর চলে নির্যাতন এবং গুলি। তীব্র প্রতিবাদের মুখে ফখরুলকে প্রত্যাহার করে বিমান-এ আনেন খালেদা জিয়া। ফখরুল বিমান প্রতিমন্ত্রী হয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় বন্ধ করে দেন। সেখানকার রাডার স্টেশন নষ্ট হয়ে পড়েছিল দীর্ঘদিন, যা আর ঠিক করাননি। রাজশাহী বিমানবন্দরেও অপারেশনাল কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, বরিশাল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল কমে যায়। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দেশের বিমানবন্দরগুলোর শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে।

সেসময় বিমান-এর নিজস্ব ৫টি ডিসি-১০ উড়োজাহাজের মধ্যে ৪টিই অচল করে রাখা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ডিসি-১০ উড়োজাহাজের ১০টি ইঞ্জিন বিদেশে মেরামতের নামে বছরের পর বছর পড়ে থাকে। ফলে ৫টির মধ্যে ৪টি ডিসি-১০ উড়োজাহাজ আর উড্ডয়নক্ষম রইল না। যার চাপ পড়ে বিমান-এর তৎকালীন মাত্র ৩টি সচল এয়ারবাস উড়োজাহাজের ওপর। ফলে বিমান-এর সমস্ত শিডিউল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

আরও পড়ুন : টানা পাঁচবার আমাদের এই স্বাধীন দেশ ছিল দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, এই চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল দেশের জন্য চরম লজ্জার

২০০৬ সালে মির্জা ফখরুল যখন বিমান-এর প্রতিমন্ত্রী হন, তখনকার কয়েকদিনের ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ের খণ্ডকালীন একটি চিত্র তুলে ধরা হলো :

efb0o9mvএটি ২০০৬ সালের ২৯শে জানুয়ারি থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র এক সপ্তাহের চিত্র। ওই এক সপ্তাহে বিমান-এর ডিসি-১০ উড়োজাহাজের ৪১টি ফ্লাইটের একটি ফ্লাইটও সময়মত ছেড়ে যেতে পারেনি। মাত্র একটি ফ্লাইট অল্প বিলম্বে ছেড়েছিল। বাকি ৪০টি ফ্লাইট অনেক বিলম্বে ছেড়েছে অথবা বাতিল হয়েছে। ওই একই সময় এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজের ১১৬টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১৭% ফ্লাইট নিয়মিত সময় চলাচল করেছে। এর পরের সপ্তাহে ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০০৬ থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি ডিসি-১০ উড়োজাহাজের ৬৭টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১টি ফ্লাইট সময়মত ছেড়েছিল। এয়ারবাস উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালিত ৯৬টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১৬টি ছেড়ে যায় নিয়মিত সময়ে। ওইসময় একটানা ২১ দিন যাবত বিমানের ডিসি-১০ উড়োজাহাজের কোনো ফ্লাইটই সময়মতো চলাচল করেনি।

আরও পড়ুন : মার্কিন গোপন তারবার্তায় বিএনপি-জামায়াত আমলে বিমানের বোয়িং দুর্নীতি ও ঘুষ কেলেঙ্কারি

ডিসি-১০ উড়োজাহাজের ১০টি ইঞ্জিন মেরামতের নামে ইচ্ছেকৃতভাবে বিদেশে ফেলে রাখা এবং ফ্লাইট শিডিউল সংক্রান্ত যেসব তথ্য পরিবেশন করা হলো, তার সকল রেকর্ড, নথিপত্র বিমান কার্যালয়ের লগবুক এবং ডাটাবেজে সংরক্ষিত আছে। তাই এ সম্পর্কে চাইলে যে কেউ খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।

[এয়ারবাস থেকে বিমান ক্রয় নিয়ে মির্জা ফখরুলের অ্যালার্জি এবং তার নিজের দুর্নীতির ইতিহাস]

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সময় নিউইয়র্কে নর্থ আটলান্টিক ট্রাভেল এজেন্সিজ নামে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট কাজ করত। মির্জা ফখরুল বিমান-এর নিউইয়র্ক কার্যালয়কে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের ওই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ছাড়া অন্যরা যেন বিমান-এর টিকেট বিক্রি করতে না পারে। সেই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্কের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করত। ফলে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমান-এর যাত্রী কমতে শুরু করে। তাদের অতি লোভ এবং কালোবাজারির কারণে একপর্যায়ে বিমানের ঢাকা-নিউইয়ের্ক রুটের ফ্লাইটই বন্ধ করে দিতে হয়।

আরও পড়ুন : জিয়া পরিবারের কমিশন বাণিজ্য: পাঁচ বছরে বিমানের আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটপাট

(সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, ২২শে জানুয়ারি ২০১৩ এবং অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত খবর)

আরও পড়ুন :

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here