কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপির যত আল্টিমেটাম আর আন্দোলন?

0
273
বিএনপি

মাঝনদীতে মাঝি ছাড়া নৌকা যেমন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনা, বিএনপির অবস্থা ঠিক সেরকম। আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য। তারা কখনই বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে উঠতে দেননি। সেই ফল ভুগছে বিএনপি। ফখরুল, রিজভী, দুদু, শামা, রুমিন, নিপুণসহ যারা এখন মাইকের সামনে গলাবাজি করেন, তাদের সি গ্রেডের নেতা বলা যায়। টিভিতে, টকশোতে, ফেসবুকে, টিকটক পর্যন্তই তাদের বাহাদুরি। রাজপথে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। থাকলে বিএনপির আন্দোলন, আল্টিমেটাম ব্যর্থ হতো না।

মির্জা ফখরুলরা প্রতিদিন গলাবাজি করছেন আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাবেন, গণঅভ্যুত্থান ঘটাবেন, জাতীয় সরকার গঠন করবেন… ইত্যাদি। তাদের হুংকারে কর্মীরাও হাসে এখন। তারা ভেবেছিল বিদেশি বন্ধুরা পাশে আছে, সেপ্টেম্বরে দেশে একটা কিছু ঘটে যাবে। সেপ্টেম্বর শেষ, নেতা-কর্মীরা হতাশ! দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোডমার্চ করে জনগণ দূরে থাক, কর্মীদের মাঝেই সাড়া জাগাতে পারেনি বিএনপি। এখন নেতারা বলছেন অক্টোবরে চূড়ান্ত যুদ্ধ। আগে বলতেন ঈদের পর আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাবেন। অনেকবার তারিখ দিয়েও সরকার পতনের হুমকি দিয়েছেন। বাস্তবে কিছুই ঘটেনি। তাই কর্মীরা এখন আর নেতাদের বক্তব্যে আস্থাশীল নয়। যদিও নেতারা বলছেন অক্টোবরেই তাদের শেষ চেষ্টা।

বিএনপি গত কয়েক বছরে বহুবার এমন শেষ চেষ্টা বা আল্টিমেটাম দিয়েছে। যেমন- চারদিন আগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ফখরুল। খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাত্রার অনুমতি দিতে এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার পর আরও ৪ দিন পার হয়েছে। এখন অব্দি আল্টিমেটামের পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারেনি। এসব অর্থহীন আল্টিমেটামে বিএনপির কদর যেমন কমছে, নেতারা হাসির পাত্র হচ্ছেন, কর্মীরাও হতাশ হচ্ছেন। রাজনীতিতে আল্টিমেটাম হলো চূড়ান্ত হুমকি। এরপর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শেষ আঘাত করা হয়। কিন্তু বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়ে নিজেরাই মুখ থুবড়ে পড়ে।

আরও পড়ুন : আন্দোলনে আগ্রহ নেই বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের,সাড়া নেই জনগণেরও

২০০৯ সাল থেকে অন্তত এক ডজন বার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে আল্টিমেটম দিলেও তা ব্যর্থ হয়। নির্বাচন বন্ধের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে ব্যর্থ হন খালেদা জিয়া। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্তির সময় খালেদা জিয়া আল্টিমেটাম দেন সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না, সেটাও ব্যর্থ হয়। পরদিনই তিনি ঘরে ফিরেছিলেন। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারের পর বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালেদার মুক্তি না দিলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ২ বছর খালেদা জিয়া জেলে থাকলেও দুর্বার আন্দোলন দেখা যায়নি।

২০১৮’র নির্বাচনের পর বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়েছিল নির্বাচন বাতিল ও পুনঃনির্বাচনের দাবিতে, কোনো লাভ হয়নি। গত বছর ১০ই ডিসেম্বর বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিল খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে, তারেক রহমান এসে গদিতে বসবেন ইত্যাদি। কিন্তু কিছুই ঘটেনি। তারা সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে। কিন্তু সেটাও ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ এক দফার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। কিন্তু সেই এক দফা দাবিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। নেতারা সবই ভুলে গেছেন। তারা দিব্যি ঘুরছেন, বাড়িতে ঘুমাচ্ছেন, বিয়ের দাওয়াত খাচ্ছেন, বিদেশেও যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন : নির্বাচন ও আন্দোলনে পুরোপুরি ব্যর্থ বিএনপি

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন বিএনপি এভাবে বারবার হোঁচট খাচ্ছে, কেন তাদের আন্দোলন কর্মসূচি সবই ব্যর্থ হচ্ছে?

বিএনপির নেতারা পরিস্থিতি না বুঝে, নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনা না করেই আল্টিমেটাম বা আন্দোলন-কর্মসূচির ঘোষণা দেন। নিউজে ফুটেজ খেতে, কর্মীদের উৎসাহ দিতে, বিদেশি অপশক্তিগুলোর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কিংবা লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের কাছে নিজেদেরকে যোগ্য বলে তুলে ধরতে এসব শো-অফ করেন তারা।

আরও পড়ুন : বিএনপি এবং তাদের ঐতিহাসিক ব্যর্থ আন্দোলন, বিএনপি কোন আন্দোলনে সাড়া দেয়নি সাধারণ জনগণ

মূলত বিএনপির ইতিহাসে বড় কোনো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড নেই। যেমনটা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেমন দলের সুসময়-দুঃসময়ে এক ডাকে রাজপথে নেমে এসে ইতিহাস বদলে দিতে সক্ষম, বিএনপির নেতা-কর্মীদের এই যোগ্যতা নেই। বিএনপিতে এই প্রজন্মের নেতারা নিজেরাই অথর্ব, কর্মীদের উজ্জীবিত করে রাজপথে নামানোর যোগ্য নন তারা। অযোগ্য নেতাদের পেছনে কর্মীরা রাজপথে নামতে আগ্রহী নয়।

[কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপির যত আল্টিমেটাম আর আন্দোলন?]

ফলে ছিন্নমূল মানুষ ভাড়া করে এনে কর্মসূচির ছবি তুলতে হয় জনসমাগম বোঝাতে। অন্যদিকে কর্মীদের দেখা যায় আন্দোলনের চেয়ে রাস্তায় উদ্ভট সাজে সেজে টিকটক করছে, সোশ্যাল মিডিয়ার তারকা হয়ে লাইক পাওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের কাছে রাজনীতি হলো পিকনিকের মত। এমন নেতা-কর্মী যে দলে আছে, তাদের আল্টিমেটাম, আন্দোলন, রোডমার্চ, লংমার্চ, পদযাত্রা, অনশনের মত কর্মসূচি তো ব্যর্থ হবেই। বিএনপির নেতারা বুঝতে পারছেন জনগণও তাদের পাশে নেই।

আরও পড়ুন :

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here