বিএনপির কোনো পড়াশোনা জানা নেতার কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়, ২৮শে অক্টোবর থেকে তাদের চলমান কর্মসূচি থেকে জাতি আসলে কী পেয়েছে? হরতাল-অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, আগুন সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়া কর্মসূচি দিয়ে কি বিএনপি দাবি আদায় করতে পারবে?
নিশ্চিত থাকুন, তিনি জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে থাকবেন। একই প্রশ্ন বিএনপির শতকরা ৯০ ভাগ অশিক্ষিত, মূর্খ, বিবেকহীন নেতাকর্মীকে করলে তারা বলবে বিএনপি নাশকতা করে না, এসব ঘটাচ্ছে সরকারের লোকজন, দায় চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। এই অশিক্ষিত মূর্খদের কথায় মনে হবে, বিএনপি আসলে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা দল, ফেরেশতাদের সংগঠন, যারা ফুল হাতে রাজনীতি করে, ক্ষমতায় থাকলে বিরোধীদলের ওপর ফুলবর্ষণ করে, বিরোধীদলীয় নেতার জন্য মাটির নিচে ৭৬ কেজি ওজনের গোলাপ পুঁতে রাখে। আর বিরোধীদলে থাকলে গণপরিবহনে ফুল ছুড়ে মারে। তাতে মাঝে মাঝে কিছু মানুষ পুড়ে মরে গেলে বিএনপির কী আসে যায়!
আরও পড়ুন : বিএনপি এবং তাদের ঐতিহাসিক ব্যর্থ আন্দোলন, বিএনপি কোন আন্দোলনে সাড়া দেয়নি সাধারণ জনগণ
অনলাইনে জরিপ চালালে দেখা যাবে বিএনপি ও সমমনা দলের কর্মী-সমর্থকদের ৯৫ ভাগের মানসিকতাই একরকম। মুক্তচিন্তা করার, সত্য যাচাই করার ক্ষমতা নেই তাদের। গুজবসেল থেকে পরিচালিত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলগুলো থেকে প্রচারিত হাস্যকর গুজব তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।
গত ২-৩ দিনে গুজবসেল থেকে যা প্রচার হচ্ছে, প্রায় সবগুলোর বক্তব্য একই। যেমন-
সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই (https://fb.watch/ocHVdovBB6/), যেকোনো সময় সরকারের পদত্যাগ (https://youtu.be/O9ZkgMkvwAM?si=D36OqE4gtyI8b8z5), শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে গোপন তথ্য (https://youtu.be/4gTe2N2XX1Y?si=FlMDwdAhYj_V2BAZ), শেখ হাসিনার দিন ফুরিয়েছে (https://fb.watch/ocXE4kMM9f), শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে হত্যা করা হবে (https://youtu.be/3obdmqxq-wY?si=hl8kk9lrtrKJ_diJ), বিএনপিকে ভেঙে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা (https://youtu.be/yGRBZl5yal4?si=B5pKmuetKXO1NSSj), নির্বাচন নিয়ে সরকার ও কমিশনের গোপন ষড়যন্ত্র (https://youtu.be/eX6urmjrI1Q?si=5BSnxSNG9i1F9Bxp), সেনাবাহিনী সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে একটা কিছু ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েছে (https://fb.watch/oczTuzvoIo/), ডিজিএফআইকে উস্কানি প্রদান (https://youtu.be/i3rszcrA5vo?si=EPm_JQAqnbWDrgqg)
ডিজিএফআই’র গোপন ফোনালাপ ফাঁস (https://www.facebook.com/watch/?v=578501857735946&ref=sharing), ওবায়দুল কাদেরকে জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি (https://www.youtube.com/watch?v=47vXbcT2d3o&ab_channel=Dr.FayzulHuq), আওয়ামী লীগের জনসভায় কর্মীরা যাচ্ছে না, কর্মীরা আওয়ামী লীগকে চায় না (https://fb.watch/ocBc1p1g-5/), আমেরিকা শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফেলেছে চারদিক থেকে (https://www.youtube.com/watch?v=O9ZkgMkvwAM&ab_channel=AlMinar), পোশাক শ্রমিককে পুলিশ গুলি করেছে (https://youtu.be/oTJtbe-CJQM?si=0zfjak7oBb7Df2Sp), (https://fb.watch/ocXPoEiLdC/), খালেদা জিয়াকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘ (https://fb.watch/ocFA5j7RB_/?mibextid=RUbZ1f), নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ফেলেছে সরকার (https://fb.watch/ocGI_ZOKoS/)
সরকার খুব কঠিন অবস্থায় আছে (https://fb.watch/ocHg0ysCUP/), রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন (https://fb.watch/ocHuwlJbQ_/), ২৮শে অক্টোবরের ঘটনায় জাতিসংঘ এবং আমেরিকা বাংলাদেশ সরকারকে হুমকি দিয়েছে (https://fb.watch/ocI6X04GBr/), নির্বাচন কমিশনকে পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দেবে (https://fb.watch/ocXHT3IKth/), হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির ক্ষতি স্বীকার করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়- যার অর্থ আন্দোলন সফল হয়েছে (https://fb.watch/ocY70-WkDa/)… ইত্যাদি। কী হাস্যকর সব গুজব!
এই গুজব ভিডিওগুলোর বক্তব্য প্রায় একই। একই ধরণের বক্তব্য ২০১৮ সাল থেকে প্রায় প্রতিদিনই শুনে আসছে বিএনপির কর্মীরা। এই তো আর ক’টা দিন, ক্ষমতার পট পরিবর্তন হচ্ছে, এই সরকার পড়ে গেল- আশার বাণী শুনে দিন গুণছে মূর্খরা। তাদের এটা বোঝার ক্ষমতা নেই, তাদেরকে প্রলুব্ধ করে, গালগল্প ও গুজব শুনিয়ে ফেসবুকার ও ইউটিউমাররা ঘরে বসে উপার্জন করছে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা। কর্মী-সমর্থকরা আশায় পথ চেয়ে বসে আছে, কবে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন আর লন্ডন থেকে পলাতক নেতা দেশে ফিরে এসে গদিতে বসে যাবে, বিএনপির সুদিন ফিরবে। আদৌ কি এটা সম্ভব?
দেশে এতসব উন্নয়ন প্রকল্প, সুবিধাভোগী সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস, সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি হরতাল অবরোধে জীবন-জীবিকায় ব্যাঘাত ঘটায় শ্রমজীবী মানুষ বিএনপির প্রতি যে ঘৃণা প্রদর্শন করছে, এসব দেখেও কি তারা বুঝতে পারছেনা, হাওয়া কোন দিকে বইছে? অশিক্ষিত কর্মীরা বুঝতে না পারলেও পড়াশোনা জানা শিক্ষিত নেতারা ঠিকই বুঝতে পারছেন। তাই তারা দলের হাইকমান্ড নির্দেশিত সহিংসতার রাজনীতি পরিত্যাগ করে সরে দাঁড়াচ্ছেন। কেউ নতুন দল করছেন, কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউ সরকারের প্রতি আস্থা রেখে বিএনপির রাজনীতিকে বিদায় জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন : বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে অনাগ্রহী নেতারা
বিএনপি অশিক্ষিত কর্মীদের রাজপথে নামিয়েছে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে গাড়িতে আগুন দিতে, এ পর্যন্ত শতাধিক বাস পুড়িয়েছে তারা। হতাহত হয়েছে অনেকেই। পুলিশ হত্যায় জড়িতরা ধরা পড়েছে, সাংবাদিক সেজে গাড়িতে আগুন দেয়া নেতাকর্মীদের পরিচয় ফাঁস হয়েছে। গাড়িতে আগুন দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত বহু নেতাকর্মী সরঞ্জামসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে। যাদের অনেকেই দলে বিভিন্ন পদে রয়েছে। আটক হওয়ার পর তারা নিজেরাই গণমাধ্যমে দলীয় পদ-পদবি জানিয়ে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এই কর্মীদের নির্দেশদাতা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই বিন লাদেনের মত গোপন গুহায় আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে উস্কানি দিচ্ছেন। আর নাশকতা করতে গিয়ে ধরা পড়ছে কর্মীরা।
এত তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেই দলের কর্মীরা দাবি করে, নাশকতাকারীরা সরকারের লোক! কারণ গুজবসেল থেকে এটাই প্রচার হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নাশকতাকারীরা শনাক্ত হওয়া এবং ধরা পড়লেও তারা কমেন্ট করছে- সবই সরকারের নাটক! একটা রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিদ্যাবুদ্ধির দৌড় কত নিচুস্তরের হতে পারে, তা এদের দেখলেই বোঝা যায়।
মানুষের জানমালের ক্ষতি করা কি রাজনীতি? ক্ষমতার লোভে খেটে খাওয়া মানুষের পেটে লাথি মারছে বিএনপি। গণসংহতির জোনায়েদ সাকি ও তার স্ত্রী তসলিমা লিজা এবং শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু একাদশ ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করে পুরো ব্যবসা অপর প্রতিদ্বন্দ্বী বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দিতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা কেউই শ্রমিক নয়, কখনো শ্রমিক ছিল না। কিন্তু গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামসহ নানান বাহারি নামের দোকান খুলে শ্রমিকদের পুঁজি করে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
২০১৪ সালে এক বিদেশি সাংবাদিকের সাথে মোশরেফা মিশুর গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল (https://www.youtube.com/watch?v=CGHXV8A6grQ&ab_channel=BDInsideNews)। যাতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রের প্রমাণ রয়েছে। এবারও বিএনপির আন্দোলন বেগবান করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শ্রমিকদের রাস্তায় নামানো হয়েছে। লাশ ছাড়া তো বিএনপির আন্দোলন জমে না। তাই লাশ ফেলা হয়েছে। জোনায়েদ সাকিও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার স্ক্রিপ্ট অনুসারে দাবি করেছে, পোশাক শ্রমিক নাকি পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। অথচ ঢাকা মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন আঞ্জুয়ারার মৃত্যু ঘটেছে রাস্তায় পড়ে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। তার শরীরে পুলিশের গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অথচ এই ঘটনাকে পুঁজি করে দেশেবিদেশে ছড়ানো হয়েছে গুজব।
করোনায় বাংলাদেশে ২০ লাখ লোক মারা যাবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি খতম, দেশ আর ক’দিন পরেই শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, ব্যাংকের সব টাকা ফুরিয়ে গেছে, এখনই সঞ্চয় ভেঙে টাকা তুলে ফেলুন, পদ্মাসেতুতে নরবলি দেয়া হচ্ছে, এসব ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে প্যানিক ছড়িয়েছিল বিএনপির যেসব মুরুব্বিরা, তারাই আবার সরকার পড়ে যাচ্ছে, বিদেশিরা হুমকি দিচ্ছে বলে গুজব রটাচ্ছে। তাদের গুজবের প্লট এতটাই শিশুতোষ আর হাস্যকর হওয়ার পরেও মূর্খ কর্মীরা তা বিশ্বাস করছে।
আরও পড়ুন : নির্বাচন ও আন্দোলনে পুরোপুরি ব্যর্থ বিএনপি
অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েকমাসে আন্তর্জাতিক অনেক সেমিনার ও সভায় যোগ দিয়েছেন, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত সমঝোতা সাক্ষর হচ্ছে, সুপার পাওয়ার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তি হচ্ছে, প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানগণ বাংলাদেশ সফর করছেন, বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করছেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে আইকনিক ও রোলমডেল আখ্যা দিচ্ছে, পাশাপাশি দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে শক্তিশালী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, মুখের ওপর জবাব দিচ্ছেন, আদায় করে নিয়েছেন তাদের সমীহ। যেসব কূটনীতিক গত কয়েকমাস ধরে বিএনপির সাথে গোপন শলাপরামর্শ করছিল, তারাও এখন সরকারের পক্ষে কথা বলছে।
[কল্যাণমুখী রাজনীতিতে ব্যর্থ বিএনপির বিএনপির একমাত্র পথ গুজববাজি]
শুধু তা-ই নয়, বিদেশি যে কূটনীতিকদের ওপর বিএনপি এতদিন নির্ভর করছিল ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বলে, সেই কূটনীতিকরা এখন উল্টো বিএনপির আন্দোলন সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে গুহায় আত্মগোপনে থাকা বিএনপির নেতারা বাবু বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। এতদিন মার্কিনপন্থী মুরুব্বিদের আব্বা ডাকতেন, এখন আবার মার্কিনবিরোধী চীনকে চাচা ডাকতে শুরু করেছেন তারা। এ থেকে এটাই স্পষ্ট, গর্তে আসলে পড়েছে বিএনপি নিজেই। তাদের এখন অস্তিত্ব রক্ষায় নতুন অবতার দরকার, বাবা দরকার, ভগবান দরকার। যদিও অক্ষমতা ঢাকতে তাদের সামনে গুজব ছাড়া কোনো পথ নেই। এসব হাস্যকর গুজব বেচে বড়জোর দুই বেলা ভাত জোটানো যায়, ক্ষমতা শুধুই অলীক স্বপ্ন।
আরও পড়ুন :